১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১, ১৩ রজব ১৪৪৬
`

চাকরির বাজারে যে ১৭টি ‘সফট স্কিল’ বেশি প্রয়োজন

- সংগৃহীত

ব্যবসার জগতে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কর্মীদের খুঁজছে, যাদের প্রযুক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে গড়ে ওঠা আরো কিছু দক্ষতাও থাকে, যেগুলোকে ‘সফট স্কিল’ বলা হয়।

এই স্কিলগুলো মূলত মানুষের এমন কিছু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, যা অন্যদের সাথে সফলভাবে কাজ করতে ও সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে। আরো ব্যাখ্যা করে বললে, এগুলো মানুষের আচরণ ও আবেগীয় বুত্তিমত্তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

এসব দক্ষতাই একজন নির্বাহী, নেতা বা ম্যানেজারকে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, অন্যদেরকে ইতিবাচকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করে। এমনকি এসব দক্ষতার মাধ্যমে এমন সব নেতিবাচক প্রবণতা এড়ানো যায়, যা নিজের পেশাগত দিককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এই দক্ষতাগুলোকে সঙ্গায়িত করা কঠিন হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এগুলোর প্রভাব সত্যিই আছে। কারণ দিনশেষে ব্যবসার দুনিয়াটাই এমন, যা ক্রমাগত পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে যায় এবং বাজারের নিত্যনতুন চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রয়োজন হয়।

সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন সফট স্কিল
বাজারে কোনো ধরনের সফট স্কিলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তা বিশ্লেষণ করতে আমরা লিংকডইন, ইনডিড, ওসিসি, কম্পুট্রাবাজো’র মতো প্ল্যাটফর্ম বিশ্লেষণ করেছি।

আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ব্যবসায়িক খাতে চাকরির বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে সাধারণ ও বেশি চাহিদাসম্পন্ন সফট স্কিলগুলো হলো-

  • নেতৃত্ব : কারো মাঝে এই দক্ষতা থাকলে তিনি একটি দলকে ইতিবাচক উপায়ে পরিচালনা করতে পারেন।
  • আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা : এটি আপনাকে মানুষ বুঝতে, তাদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
  • সমালোচনামূলক ও কৌশলগত চিন্তা : কোম্পানিকে কৌশলগত পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোকে সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করা।
  • সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন : কোম্পানির উন্নতির প্রক্রিয়াগুলোতে সৃজনশীলতা ও নতুনত্ব আনা।
  • পেশাগত নীতি : এটি হলো একজন ব্যক্তির আচরণ, নীতি ও সততার প্রতিফলন।
  • কার্যকর যোগাযোগ : নিজের ভাবনাকে স্পষ্ট ও সহজভাবে প্রকাশ করা। হতে পারে সেটি লিখিতভাবে কিংবা মৌখিকভাবে।
  • দলগত কাজ : কোম্পানির ভালোর স্বার্থে দলের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকা।
  • সমস্যা সমাধান : অপ্রত্যাশিত সমস্যার সমাধান পদ্ধতিগতভাবে খুঁজে বের করা এবং বিশ্লেষণ করা।
  • মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা : নতুন পরিস্থিতিতে দ্রুত মানিয়ে নিতে সক্ষম ও নমনীয় হওয়া।
  • সময়ের ব্যবস্থাপনা : উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কার্যকরভাবে সময়কে ভাগ করা।
  • আলোচনার ক্ষমতা : বিভিন্ন বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষমতা।
  • সহানুভূতি : দলের এবং বাজারের প্রয়োজনীয়তা বুঝে সাড়া দেয়ার ক্ষমতা।
  • গ্রাহক কেন্দ্রিকতা : গ্রাহকের চাহিদা ও প্রত্যাশার কথা মাথায় রাখা।
  • লক্ষ্য অর্জন : পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের দক্ষতা।
  • পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ : কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া। তারা যাতে বাধা পেরোতে পারে, এর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে সাহায্য করা।
  • প্রোঅ্যাকটিভিটি : সমস্যা বা প্রয়োজনকে আগে থেকে অনুমান করে আগাম উদ্যোগ গ্রহণ করা।
  • দায়িত্ব ও সততা : নিজের দায়িত্বগুলো সততা ও স্বচ্ছতার সাথে পালন করা।

এ দক্ষতাগুলো কি দেখানো সম্ভব?
অনেক দশক ধরেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে থাকা জ্ঞান কর্মী নিয়োগের বেলায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই বিষয়গুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, সুপারিশপত্র ও পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রমাণ করা যায়।

তাহলে সফট স্কিলগুলোকে আমরা কিভাবে প্রমাণ করব? নিয়োগকর্তারা কিভাবে এসব দক্ষতার ক্ষেত্রে আমাদের যোগ্যতার স্তর যাচাই করতে পারেন?

নিজেকে আরো ভালোভাবে জানার জন্য সেস্ফ-ডায়াগনোসিস বা আত্মমূল্যায়নের পরামর্শ দেয়া হয়। নিয়োগকর্তারাও প্রার্থীদের সফট স্কিল মূল্যায়নে এই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

সফট স্কিল কিভাবে বাড়াবেন?
সফট স্কিল বাড়াতে নিয়মিত নিজেকে আপডেট করাটা গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে কোনো কর্মশালা, সেমিনার বা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।

সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা গড়ে তোলা ও নিজেকে জানার জন্য আত্মবিশ্লেষণ করা জরুরি। ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতির জন্য নিয়মিত ফিডব্যাক নেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন বিশেষজ্ঞ স্টিফেন আর কভির কিছু কথা দিয়ে শেষ করছি।

তিনি বলেছেন, ‘একজন দক্ষ পেশাজীবী ও অসমান্য নেতার মধ্যকার মূল পার্থক্য সফট স্কিল। সফট স্কিল বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা অন্যদের সাথে গভীর ও আন্তরিকভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারি। এগুলো আমাদের অন্যদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ও কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে সহায়তা করে।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল